-এস এম তুষার
বিবিসি বাংলা পাঠক জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হিসাবে আমরা জ্ঞাত হয়েছি যে, চলমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে গোলাম আযম শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ( গোলাম আযম-২৩, শেখ হাসিনা-২৪তম স্থানে)। যদিও এই বঙ্গরাজ্যে গো. আযমকে বলা হয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার শিরোমনি। বঙ্গ থেকে বাংলায় একটি প্রবাদ প্রবচন সঙ্গত কারন হিসাবে খুব খাপ খায়- ‘কই যাও গোপাল সঙ্গে যাবে কপাল’। গুনে গুনে আজ থেকে ১,৩৪৯ বছর পূর্বে প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যে হানা দিয়েছিলো পশ্চিম ভারতের শক্তিশালী থানেশ্বর রাজ্য। বঙ্গের ক্ষমতায় তখন সম্রাট শশাঙ্ক। সে সময় বঙ্গের রাজধানী মগধ (পাটলীপুত্র) দখল করে থানেশ্বর সৈন্যরা। যারা ছিলো সম্রাট হর্ষবর্ধনের অনুগত। তারা বঙ্গের কোথাও লুটপাট চালায়নি। কারন ইতিহাস বলে, সম্রাট হর্ষবর্ধন ভালো লোক ছিলেন। লুটপাট আর হত্যা চালিয়েছে কামরুপ রাজ্য ( বর্তমান আসাম)। তারা ছিলো সেদিনের রাজাকার.. তারপর বাংলা হলো। হলো মানে অনেক বছর বাদে। রাজধানী মুর্শিদাবাদ। ততক্ষনে বাংলায় নবাবী শাসন। এবার হানা দিলো আংরেজ দখলদাররা। নবাব সিরাজের সাথে সাথে বঙ্গের স্বাধীনতারও পতন হলো। হিন্দু-মুসলমান রাজাকাররা কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে লুটপাট চালালো। ইতিহাস বলে তারা হিন্দু মানে ব্রাক্ষ্মন হিন্দু আর মুসলমান মানে শিয়া মুসলমান, পারস্য থেকে আগত। তারপর ১৯৭১। হানাদার মানে পশ্চিম পাকিস্থান। আর রাজাকার মানেতো রাজাকার। তারা স্বদেশী, মুক্তিযোদ্ধারাও স্বদেশী। রাজাকাররা বরাবর ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তা নয়। মাওবাদী মুক্তিদের একটা শক্তিশালী অংশ ১৯৭১ থেকেই আওয়ামী মুক্তিদে খুজতে থাকে মারবে বলে, এই মর্মে- এরা রুশ ভারতের দালাল। শীঘ্র শীঘ্র মাওবাদী মুক্তিরা চাইনিজ রাজাকার হিসাবে চিহ্নিত হতে থাকলো। আমরা অবশ্য এখন সে বিতর্কে যাবোনা। দেখা যাচ্ছে হানাদার-রাজাকার হাজার বছরেও বাংলার পিছু ছাড়েনি। এমতবস্থায় বিবিসির পাঠক জরিপ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী যাচাই বাছাই করতে যেয়ে হাজার বছরের খেইটা শুধু হারিয়ে ফেলে। মহাজ্ঞানী অতীশ দীপঙ্কর ব্যতিরেকে আর বাকীগন ১০০/২০০ বছরের মধ্যে। ব্যূৎপত্তিগত দিক থেকে বাঙ্গালী জিনিষটা যে কি এবং কারা কারা বাঙ্গালী তার মীমাংসা শেষ পর্যন্ত এখনও হচ্ছে-
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী আর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নেতৃত্ব ভিন্ন বিষয়। এদ্বয়কে গুলিয়ে ফেলার মানে হচ্ছে- ২টা গরুর সাথে ৩টা ছাগল যোগ করলাম, ফলাফল ৫, এখন এই ৫টা কি? গরু না ছাগোল? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী মানেতো আপাদমস্তক বাঙ্গালী। পাইপে হাভানা তামকের ধূম্রপানতো বাঙ্গালী সংস্কৃতি নয়, তাঁেলর আশেঁর টুপিও বোধহয় বাঙ্গালী সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নেতৃেত্বর কথা বলা যায়, তাতে সম্রাট শশাঙ্ক, মহারাজা গোপাল, মহারাজা বিজয় সেন, নবাব মুর্শিদ কুলি খান, নবাব আলিবর্দী খান, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাশিম, শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী এই নেতৃত্বের অনেকেই আবার বাঙ্গালী ছিলেন না, ছিলেন না বলতে যেমন খান সাহেবরা বা তাদের পূর্ব-পুরুষগন এসেছে পারস্য (ইরান) থেকে, তারা শিয়া মুসলমান। অনেকের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারনা যে, যাহা কিছু হিন্দুত্ব তাহা কিছুই বাঙ্গালীত্ব। তাহাই যদি হয় তবেতো, বাঙ্গালীত্ব মহারাজা লক্ষ্মন সেনের সাথে খিড়কি দুয়ার দিয়ে পালিয়েছে একাদশ শতাব্দীতে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট